পাতা বেটে পুরানো একজিমায় লাগলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
কানে পুজ হলে করনীয় কি মেহেদি পাতার উপকারিতা মুখ গলার ক্ষত হলে করনীয় কি চুল ভালো রাখার উপায় কী ঘাড়ের ব্যথা হলে করনীয় কি
পাতা বেটে পুরানো একজিমায় লাগলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
মেহেদি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম :( Lawsonia inermis)
পরিচয় :
মেহেদি পাতা এক ধরনের সপুষ্পক জাতীয় উদ্ভিদ । এই গাছের পাতা প্রাচীনকাল হতে ( ত্বক, চুল, নখ, পশুর চামড়া ও পশম) রঙিন করার জন্য ব্যবহৃত হয় থাকে ।
মেহেদি গাছ লম্বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ বলে, এটি সাধারণত ১.৮ / ৭.৬ মিটার (৬ থেকে ২৫ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয় থাকে। এটি একটি বহু শাখাযুক্ত উদ্ভিদ। কচি সময় এর কাণ্ড গুলো বেশ নমনীয় থাকলেও আস্তে আস্তে বেশ শক্ত পোক্ত এবং অভঙ্গুর হয়ে উঠে।
পাতা-ফুল-ফল:
দীর্ঘজীবী মেহেদি উদ্ভিদে ফুল ফুটতেও দেখা যায় আবার এই ফুল থেকে ফল হয়। প্রতি ফলে ৩২/ ৪৯ বীজ থাকে এবং এরা অনিয়মিতভাবে চার ভাগে খোলে থাকে ।কাণ্ডে পাতা একে অপরের বিপরীতে বৃদ্ধি হয়।
চাষাবাদ:
মেহেদি উদ্ভিদ প্রচন্ড তাপ সহনশীল একটি উদ্ভিদ। এগুলো শুষ্ক এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের উদ্ভিদ। এগুলো প্রায় সর্বোচ্চ ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও টিকে থাকতে পারে।
বৃষ্টিপাতের ব্যবধানের সময় এদের দ্রুত বৃদ্ধি হয় এবং পুরান কাণ্ড হতে নমনীয় এবং নতুন কাণ্ড বের হতে দেখা যায়। শীতকালে এদের পাতাগুলি ধীরে- ধীরে হলুদ হয়ে যায় এবং দীর্ঘ শুষ্ক বা শীতল হয়ে যায়। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১° সেন্টিগ্রেড (৫২° ফারেনহাইট) এর নিচে থাকে সেখানে এটি বৃদ্ধি পায় না। আর তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ৫°সেন্টিগ্রেড (৪১°ফারেনহাইট) এর নিচে নামলে মারা যায়।
মেহেদি ব্যবহার :
আদিকাল থেকেই রঞ্জক হিসেবে মেহেদি ব্যবহারের প্রচলন চলে আসছে। বাংলাদেশ এবং ভারতে ঈদ ও বিয়ে উপলক্ষে এর ব্যবহার অনেকটা আবশ্যিকরূপে প্রচলিত। চুলের রঙ হিসেবে মেহেদির ব্যবহারে কথা উল্লেখ্যযোগ্য।
উপকারিতা গুলো হলো:-
১. ছত্রাক-রোধক হিসেবেও মেহেদি কার্যকর।
২. কাপড় ও চামড়া সংরক্ষণে মেহেদি এর ব্যবহার হয়।
৩.মেহেদি ফুল থেকে সুগন্ধী তৈরি করা হতো বহু প্রাচীনকাল থেকেই।
৪. পোকা দমনেও মেহেদি ব্যবহৃত হয়।
৫. মেহেদি পাতার রস ও সরষে তৈল ঘাড়ে মালিশ করলে ঘাড়ের ব্যথা কমে যায়।
৬.মেহেদি পাতা বেটে নখে ও চুলে লাগালে নখ ও চুল ভালো থাকে।
৭.পায়ের তলায় পাতা বাটার প্রলেপ দিলে চোখে গুটি ওঠে না আর কোনদিন ।
৮.পাতা বেটে পুরানো একজিমায় লাগলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় ।
৯.পাতা বেটে হাতে লাগালে লাল হয়। অনেকে পাকা চুলেও ব্যবহার করেন।
১০.ইউনানী চিকিৎসকদের মতামত হলো , চুল উঠে যাওয়া বা পাকায় ১টি হরিতকি ও ১০ থেকে ১২ গ্রাম মেহেদি পাতা একটু থেতো করে ২৫০ মিলিগ্রাম পানিতে সেদ্ধ করে ৬০ থেকে ৭০ মিলি লিটার থাকতে নামিয়ে ছেকে ঠান্ডা করে মাথায় লাগালে খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়।
১১.শ্বেতপ্রদরে ২৫ গ্রাম মেহেদি পাতা সেদ্ধ করে সেই পানিতে উত্তরস্তি (ডুশ দেওয়া) দিলে সাদাস্রাব ও অভ্যন্তরের চুলকানি প্রশমিত হয়। স্থানভ্রস্ট জরায়ুর ক্ষেত্রেও উপযুক্ত পদ্ধতি প্রয়োগ করলে অসুবিধা কমে যায়।
১২.শুক্রমেহ রোগে মেহেদি পাতার রস এক চা চামচ দিনে দুবার পানিতে বা দুধের সাথে একটু চিনি মিশিয়ে খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে উপকার পাওয়া যায়।
১৩.মুখ গলার ক্ষতে পাতা সেদ্ধ পানি মুখে খানিকক্ষন রাখলে সেরে যায়।
১৪.গ্রীষ্মকালে ঘেমে গিয়ে গায়ে দুর্গন্ধ হলে মেহেদি পাতা ও বেনামূল সেদ্ধ পানিতে গোসল করলে উপকার পাবেন।
১৫.কানে পুজ হলে এ পাতার রস ২ ফোটা করে কানে দিলে ৪/৫ দিনে পুজ পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
১৬.চোখ ওঠা অল্প কয়েকটা পাতা থেঁতো করে গরম পানিতে ফেলে ছেকে সেই পানির ফোটা চোখে দিলে সেরে যাবে।
১৭.চোখের কোন থেকে পুজের মতো পড়তে থাকলেও এটি ব্যবহার করলেও সেরে যায়।
১৮.প্রাচীনপন্থী বৈদ্য সম্প্রদায়ের মতে শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমান সঠিক আছে কি না, তা জানার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। মেহেদি পাতা বাটা হাতের তালুতে লাগালে রং টা লালচে আভা দিলে ভাল, না হলে হিমোগ্লেবিনের পরিমান কম আছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে।
১৯.অনিদ্রা রোগ হলে মেহেদি ফুলের বালিশে ঘুমালে ভল পল পাওয়া যায়। এতে আছে লাইলাকের গন্ধ। গন্ধটি পার্থিব সস্তায় সমৃদ্ধ।
What's Your Reaction?